বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৪
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১
The Daily Post

সিরাজগঞ্জে যমুনার চরে মরিচের বাম্পার ফলন ভালো দামে খুশি কৃষক 

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

সিরাজগঞ্জে যমুনার চরে মরিচের বাম্পার ফলন ভালো দামে খুশি কৃষক 

জেলার যমুনা নদীতে জেগে ওঠা ছোট-বড় অসংখ্য চরাঞ্চলে শুকনো মৌসুমে সবুজ প্রকৃতি ফসলের মধ্যে নতুন পলিমাটিতে মরিচের ব্যাপক চাষ হয়েছে। মানুষের কাছে ব্যাপক চাহিদা থাকায় চাষিরা একে তুলনা করছেন লাল সোনার সঙ্গে। চলতি বছর মরিচের বাম্পার ফলন ও ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে।

জেলা কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এবছর জেলায় ১ হাজার ৮৭০ হেক্টর জমিতে মরিচের চাষ হয়েছে। এরমধ্যে, সদর ৬৮০, কাজিপুর ৪৪০, রায়গঞ্জ ৪৬৫, উল্লাপাড়া ৯৫, কামারখন্দ ৭৮, চৌহালী ৭০, শাহজাদপুর ২২, তাড়াশ ১০ ও বেলকুচি উপজেলায় ১০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। চাষকৃত মরিচের মধ্যে হাইব্রিড জাতের বিজলী, যমুনা, রশনী, ঝিলিক উন্নত জাতের মধ্যে বারি-৩, সুপার সনিক, রংপুরী, বগুড়া ছাড়াও স্থানীয় জাতের মরিচের ব্যাপক আবাদ হয়েছে। 

প্রতি হেক্টর জমিতে মরিচের উৎপাদন হয়েছে ১০ দশমিক ৬৩ টন। এবছর জেলায় শুকনা মরিচের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৬ হাজার ৪৮৮ টন। যা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে সারা দেশে। এতে অন্য ফসলের চেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছে স্থানীয় চাষীরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, যমুনার বিস্তৃর্ণ চরাঞ্চল জুড়ে মরিচের খেত থেকে কৃষক-কৃষাণীরা দলবেধে লাল, সবুজ মরিচ তোলার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। জমি থেকে মরিচ তুলে বস্তাবন্দি করছেন। প্রতিদিন দূর-দূরান্তের মরিচের পাইকাররা এখান থেকে মচির ক্রয় করে নদীপথে নিয়ে যাচ্ছেন আড়তে। সেখান থেকে জেলার চাহিদা মিটিয়ে চলে যাচ্ছে সারা দেশে। 

স্থানীয় বাজার সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে আর শুকনো মরিচ মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় জেগে ওঠা চরগুলোতে মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে। এখানকার উৎপাদিত কাঁচামরিচ ও শুকনো মরিচ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যাচ্ছে।

প্রতি সপ্তাহের শনি ও বুধবার কাজিপুর উপজেলার নাটুয়াপাড়া হাসে পাইকররা এসে মরিচ ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে দেশের বড় বড় কোম্পানীর ব্যাপারীরাও এখানকার মরিচ ক্রয় করছেন। ফলন ও ভালো দাম পেয়ে চরের কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে।

মরিচ চাষীরা জানান, এ চাষাবাদে বিঘা প্রতি ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা খরচ পড়ে। মৌসুমে ৩ থেকে ৪ দফা পানি সেচ ও সামান্য সার কিটনাশক ছাড়া এ চাষাবাদে তেমন কোন খরচ ও ঝামেলা নেই। মরিচ লাগানোর পরে ৬০ থেকে ৭০ দিনের মাথায় তা উঠানো শুরু হয়। প্রতি সপ্তাহে একবার করে প্রায় ৩ মাস একটানা খেত থেকে মরিচ তোলা হয়। 

অল্প খরচে স্থানীয় কৃষকরা অন্য ফসলের চেয়ে এ চাষাবাদে ব্যাপক লাভবান হচ্ছেন। এই মরিচগুলো জমি থেকে উঠানোর পর চাষিরা যমুনার চরে একটানা ১২/১৫ দিন শুকিয়ে রাখেন। এখানকার উৎপাদিত মরিচের ব্যাপক ঝাল থাকায় দেশজুড়ে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। 

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার সাদাত বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সদর উপজেলায় ৬৮০ হেক্টর জমিতে মরিচের চাষ হয়েছে। কৃষি বিভাগের সার্বিক সহযোগিতায় এবারে মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে। বিঘা প্রতি ৫০ থেকে ৬০ মন মরিচের ফলন হয়েছে। ফলন ও দাম ভালো পেয়ে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে।

সিরাজগঞ্জ কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের (উপ-পরিচালক) বাবুল কুমার সূত্রধর বলেন, এ বছর জেলায় ১৮৭০ হেক্টর জমিতে মরিচের চাষ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৬ হাজার ৪৮৮ টন। যার বাজার মূল্য প্রায় শতকোটি টাকা। আগামীতে কৃষকরা মরিচ চাষে আগ্রহী হবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

টিএইচ